নতুন স্মার্টফোন কেনার পর এই ১০ টি কাজ অবশ্যই করুন

নতুন স্মার্টফোন কেনার পর এই ১০ টি কাজ অবশ্যই করুন

নতুন স্মার্টফোন হাতে পেয়ে আমরা সবাই উচ্ছ্বাসিত হই। ফোনটি চালু করার পর এবং ব্যবহার শুরু করার আগে কিছু জরুরি কাজ আছে, যেগুলো করলে আপনার স্মার্টফোনের ডাটা সুরক্ষা, ফোন ব্যবহারের সহজতা এবং নতুন স্মার্টফোনের সব সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন। চলুন, সেই ১০টি কাজ আরো বিস্তারিতভাবে দেখা যাক ।

১. পুরোনো ফোন থেকে তথ্য ট্রান্সফার

আপনার পুরোনো ফোনে থাকা কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি, ভিডিও, ফাইলস, ডকুমেন্ট এগুলো নতুন ফোনে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। আজকাল প্রায় সব ফোনেই পুরোনো ফোন থেকে তথ্য ট্রান্সফারের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকে।

নির্দিষ্ট কোম্পানির নিজস্ব অ্যাপ বা কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যাপের সাহায্যে এই কাজটি সহজেই করা যায়। সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

  • ওয়াই-ফাই ডাইরেক্ট ট্রান্সফার: এই পদ্ধতিতে দুটি ফোনকে ওয়াই-ফাই এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে হয়। এরপরে পুরোনো ফোন থেকে ফাইলগুলো সিলেক্ট করে নতুন ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া যায়।
  • ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার: আপনি যদি গুগল ফটোস, ড্রপবক্স বা অন্য কোন ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করেন, তাহলে পুরোনো ফোনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ক্লাউডে স্টোর করে নিন। এরপরে নতুন ফোনে একই অ্যাপটি ইন্সটল করে ক্লাউড থেকে ফাইলগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

২. গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে সেটআপ

আপনার গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে ফোনটি সেটআপ করুন। এতে করে আপনি সহজেই গুগল প্লে স্টোর, জিমেইল, গুগল ফটোস, ইউটিউব সহ আরো অনেক গুগল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন।

এছাড়াও, গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে ফোন সেটআপ করলে আপনার কন্টাক্ট লিস্ট, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিঙ্ক হয়ে যাবে। ফলে এক ফোনে করা যেকোনো পরিবর্তন অন্য ফোনেও প্রতিফলিত হবে।

৩. প্রয়োজনীয় অ্যাপ ডাউনলোড

আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি), মেসেজিং অ্যাপ (মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম ইত্যাদি), ব্যাংকিং অ্যাপ, মুভি স্ট্রিমিং অ্যাপ (Netflix, Disney+ Hotstar ইত্যাদি), অনলাইন শপিং অ্যাপ ( Amazon, Flipkart ইত্যাদি ) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন। তবে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনি নিরাপদ এবং স্বনামধন্য ডেভেলপারদের তৈরি করা অ্যাপ ডাউনলোড করছেন।

৪. ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস রিকগনিশন সক্রিয় করুন

আপনার ফোনের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার বা ফেস রিকগনিশন ফিচারটি সক্রিয় করুন। এতে করে পাসওয়ার্ড ছাড়াই কেবল আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা মুখ দিয়ে ফোনটি আনলক করতে পারবেন।

তবে মনে রাখবেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস রিকগনিশন পদ্ধতিগুলো পাসওয়ার্ডের চেয়ে কম নিরাপদ হতে পারে। ফলে, জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করা উচিত।

৫. হোম স্ক্রিন পার্সোনালাইজ করুন

আপনার পছন্দের ওয়ালপেপার এবং উইজেট দিয়ে হোম স্ক্রিনটি সাজিয়ে নিন। এতে ফোনটি ব্যবহার করার সময় আরও বেশি মজা পাওয়া যাবে।

সাধারণত ফোনগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ওয়ালপেপার এবং উইজেট থাকে। এছাড়াও, গুগল প্লে স্টোর থেকেও আরও অনেক ওয়ালপেপার এবং উইজেট অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়।

৬. ওয়াই-ফাই সংযোগ

একটি নিরাপদ ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে আপনার ফোনটি সংযোগ করুন। ওয়াইফাই এর সাহায্যে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং অ্যাপ আপডেট, ডাটা ব্যাকআপ ইত্যাদি কাজ সহজে করতে পারবেন।

তবে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনি কোনো খোলা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে সংযোগ করছেন না। কারণ, খোলা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে আপনার ডাটা হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. ডাটা ব্যাকআপ

আপনার ফোনের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা যেমন ছবি, ভিডিও, কন্টাক্ট লিস্ট, নথি ইত্যাদির একটি ব্যাকআপ নেওয়া খুবই জরুরি। ফোন হারিয়ে ফেলা বা নষ্ট হয়ে গেলে এই ব্যাকআপ আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

  • গুগল ফটোস: ছবি এবং ভিডিওর ব্যাকআপের জন্য গুগল ফটোস অ্যাপটি খুবই কার্যকর। এই অ্যাপটিতে আপনি ফ্রিতে 15GB পর্যন্ত স্টোরেজ পেতে পারবেন।
  • গুগল ড্রাইভ: গুরুত্বপূর্ণ নথি, ছবি, ভিডিও সহ যেকোনো ধরণের ফাইলের ব্যাকআপের জন্য গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করা যায়। ফ্রিতে আপনি 15GB স্টোরেজ পাবেন।
  • ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস: গুগল ড্রাইভ ছাড়াও ড্রপবক্স, আই স্টোরেজ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করে ফাইলের ব্যাকআপ নেওয়া যায়। এগুলোর বিনামূল্যে স্টোরেজ সাধারণত কম থাকে তবে অতিরিক্ত স্টোরেজ কিনে নেওয়ার অপশন থাকে।

৮. ফাইন্ড মাই ডিভাইস সক্রিয় করুন

ফোনটি হারিয়ে ফেলা বা চুরি হয়ে গেলে ফাইন্ড মাই ডিভাইস (Find My Device) ফিচারটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এটি সক্রিয় করে রাখলে আপনি গুগল ম্যাপের সাহায্যে ফোনের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারবেন, এমনকি ফোনটি রিং করাতে বা রিমোটলি মুছে ফেলতে পারবেন।

ফাইন্ড মাই ডিভাইস সক্রিয় করার জন্য:

  • সেটিংস (Settings) অপশনে যান।
  • Google অ্যাকাউন্ট (Google Account) এ ক্লিক করুন।
  • Security এ যান।
  • Find My Device অপশনে গিয়ে এটি সক্রিয় করুন।

৯. সর্বশেষ সফটওয়্যার  আপডেট

নতুন ফোন কেনার পরে প্রথমেই সর্বশেষ সফটওয়্যার আপডেটটি ইন্সটল করুন। এই আপডেটগুলোতে সাধারণত পারফরম্যান্স উন্নতি, বাগ ফিক্স এবং সর্বশেষ নিরাপত্তা প্যাচ থাকে।

সফটওয়্যার আপডেট করার জন্য:

  • সেটিংস (Settings) অপশনে যান।
  • About Phone বা System এ যান।
  • Software Update অপশনে ক্লিক করে আপডেট থাকলে ইন্সটল করুন।

১০. নতুন ফিচার এক্সপ্লোর করুন

শেষ কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ না, আপনার নতুন স্মার্টফোনের সব নতুন ফিচারগুলো এক্সপ্লোর করুন! ক্যামেরা, ডিসপ্লে, বিশেষ সেন্সর ইত্যাদি নিয়ে কিছু পরীক্ষা চালিয়ে দেখুন ফোনটি কী কী করতে পারে।

নির্মাতা কোম্পানি সাধারণত নিজেদের ওয়েবসাইট বা ফোনের সাথে দেওয়া ইস্ত্রিকা (manual) এ নতুন ফিচারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। সেগুলো পড়ে নেওয়াও আপনাকে স্মার্টফোনের সব সুবিধা ভোগ করতে সাহায্য করবে।

এই দশটি কাজ করার পর আপনি আরামে আপনার নতুন স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করতে পারবেন। নতুন ফোনটি আপনাকে দারুণ অভিজ্ঞতা দিবে ।

Similar Posts